অসম্ভবঃ দুই

জীবনের এই চরম মুহুর্তগুলো অনেকবার এসেছে ফ্রেডের জীবনে এবং প্রতিবারই সে টিকে থেকেছে সাফল্যের সাথে, এরই নাম বোধহয় জীবন-যুদ্ধ, ভাবছিল ফ্রেড। তার বাবা বহু আগেই তাদের ত্যাগ করেছে: মার কাছে সে বহুবার একথা শুনেছে, কিন্তু তার বাবা এখন কোথায়, জীবিত কি মৃত - তা কোনোদিনও মা বলেনি তাকে। এসব মনে হলে মায়ের ওপর খুব অভিমান হয় ফ্রেডের। বিশেষত একারণে যে তার মা আরেকটা বিয়ে করেছে সে তার মায়ের পেটে থাকতেই।
ড্যানের ডাকে সে ঘুম থেকে জাগল। ভাবতে ভাবতে আজও সে পড়ার টেবিলে ঘুমিয়ে পড়েছে।
নাহ, ইদানিং যেন পড়াশুনায় আর মনই বসছে না!
"কিরে কি সিদ্ধান্ত নিলি?" জিজ্ঞেস করল ড্যান।
ফ্রেডের মনে পড়ল, জনের দেয়া টিউশনি সে করাবে কিনা তা আজ তাকে জানানোর কথা। ঠিক এ চিন্তাটাই সে করছিল কিন্তু হুট করে সব কেমনজানি এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল।
'জীবন-যুদ্ধ', হাসল সে।
-"কি ব্যাপার হাসছিস যে? আমি কি তোকে কোনো হাসির কথা বললাম নাকি?"
ফ্রেড হাসি থামিয়ে ড্যানের দিকে তাকাল। তারপর সে গম্ভিরমুখে বলল, "না, এমনিতেই হাসছিলাম।"
"টিউশনির ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নিলি?" পুনরায় জিজ্ঞেস করল ড্যান।
-"সিদ্ধান্ত? সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা যদি আমার থাকত তবে জনের সাথে দেখাই করতাম না। মানুষ যখন বেকায়দায় পড়ে তখন তার 'নিজের সিদ্ধান্ত' বলে আর কিছু থাকে না।"
-"থাকে, থাকে, তুই আসলে নিজেকে বড় অসহায় ভাবিস। দুনিয়ার সব মানুষই জীবনে কোনো না কোনো সময় কঠিন বাস্তবতার সন্মুখীন হয় এবং তারা অধিকাংশই তা জয় করে নেয়। "
-"তুমি তো কোনোদিন এর মাঝে পড়নি, যেদিন পড়বে সেদিন বুঝবে।"
হাসল ড্যান। বলল, "মানুষের লাইফস্টাইল দেখে কি সব কিছু বোঝা যায়?"
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ড্যান আবার শুরু করল, "যাকগে ওসব কথা। আমি তাহলে জনকে বলে দিই যে তুমি তার প্রস্তাবে রাজী হয়েছ।"
বলেই সে ঘর হতে বেরিয়ে গেল।
ফ্রেড পিটারসন পার্কের একটা বেঞ্চে বসে আছে। জনের সাথে তার এখানে দেখা করার কথা। পার্কটা তার কলেজের একদম কাছে। কিন্তু সে একদিনও এখানে আসেনি। পার্কের পাশেই পিটারসন মেমরিয়াল। মেমরিয়ালের দুইটা গেট: একটা বাইরে থেকে, যা কিনা মূল ফটক এবং অপরটি পার্কের মধ্য দিয়ে। পার্কের মধ্য দিয়ে ঢোকার ফটকটির ওপরে পিটারসনের এক বিরাট ছবি।
ফ্রেড ছবিটার দিকে তাকিয়ে হাসছিল।
"তুমি যা ভাবছ মূল ঘটনা আসলে তা ছিল না।" বলতে বলতে জন এসে তার পাশে বসলেন।
-"তাহলে কি ছিল? পিটারসন এলিয়েনদের সাথে যুদ্ধ করেন নি?"
-"করেছিলেন এবং মজার ব্যাপার হলো তিনি নিজেও তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।"
-"এগুলো তো রূপকথা।"
-"তোমার কাছে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক। তুমি তো আর বইয়ের বাইরের ইতিহাস জান না।"
-"কেন? বইগুলোতে কি ভুল কিছু লেখা আছে?"
-"না নেই। তবে ইতিহাসের একটা বৈশিষ্ট্য কি জান? আংশিক ইতিহাস জেনে কোনোকিছুই যাচাই করা যায়না। তুমিও বুঝবে যেদিন আমাদের কাতারে আসবে।" থামল জন। তারপর আবার শুরু করলেন, "যাহোক, এখন কাজের কথায় আসা যাক। তুমি তাহলে আগামীকাল থেকে শুরু করছ।"
-"কিন্তু কাকে পড়াব তা তো এখন পর্যন্ত বলেন নি!"
-"আমার নাতিকে পড়াবে। ড্যান তোমাকে আমার ছেলের বাড়িতে নিয়ে যাবে।" থামল জন। তারপর আবার শুরু করলেন, "ওকে। তাহলে সে কথাই রইল। আমি তাহলে উঠি। জানই তো কত ব্যস্ততার মাঝে থাকতে হয়। মনে রেখ, ইতিহাস হলো এমন একটা জিনিস যা মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আর যারা ইতিহাস বিমুখ তারা পেছনেই পড়ে থাকে। এখন হয়তো তুমি তা বুঝবে না। কিন্তু যখন তোমার জীবনের সব স্বপ্ন সত্যি হবে, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিন বুঝবে, জীবনে স্বার্থকতা আসলে কোথায়। অবশ্য তখন সময় আর হয়তো থাকবে না নিজেকে শুধরিয়ে নেয়ার মতো। তবে যারা নিজেকে শুধরিয়ে নিতে পারে তারা হলো বিশ্বের সবচেয়ে সুখি মানুষদের একজন।" বলেই জন উঠে দাঁড়াল এবং দ্রুত পা বাড়াল পিটারসন মেমরিয়ালের ফটকের দিকে। ফ্রেড সেদিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর পার্কের বেঞ্চটার দুদিকে দু হাত প্রসারিত করে তাকিয়ে থাকল আকাশের দিকে।