অসম্ভবঃ এক

[এটা নিছক একটা লেখা। কারো জীবন কাহীনির সাথে মিলে গেলে তা অলৌকিক ছাড়া আর কিছু নয়]

পৃথিবী নামে পরিচিত গ্রহ থেকে ২০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এক গ্রহের বাসিন্দা হলো ফ্রেড। সে সবে মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠেছে। খুবই ভালো ছাত্র সে। জীবনে সে এক রোল ছাড়া দুই রোল করে নি। সে যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পড়ে, তা তার দেশের সব চেয়ে বিখ্যাত একটা প্রতিষ্ঠান। সে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারির একজন ছাত্র।
সে যে দেশে থাকে সে দেশের নাম 'সোমার'। তার পৃথিবীতে সব চেয়ে ছোট রাষ্ট্র এটা।
ফ্রেড বড় হয়ে অর্থনীতিবিদ হতে চায়। গরিব ঘরের সন্তান ফ্রেড অনেক কষ্টে এতদূর উঠেছে, অনেক দুঃখ-কষ্ট সে নিরবে মাথা পেতে নিয়েছে, আজ সে প্রতিষ্ঠার দ্বার প্রান্তে উন্নিত হয়েছে।
তার বিশ্ববিদ্যালয়ের যে হলে সে থাকে সেখানে তার একজন রুমমেটও রয়েছে। তার রুমমেটের নাম হলো ড্যান। সে ছাত্র রাজনীতির সাথে বিশেষভাবে জড়িত। সে মাঝে মাঝে ফ্রেডকে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বুঝাতে চেষ্টা করে; কিন্তু সে কানেই নেয় না। তার সামনে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে, তা বাদ দিয়ে সে রাজনীতি করবে! এটা তার মতো কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হওয়া ব্যক্তির কাছে কতকটা নির্মমও ঠেকে।
সারাদিন ফ্রেড পড়াশুনা করে, নিয়মিত ক্লাশ করে, আর অবসর পেলে তার স্বপ্ন নিয়ে ভাবে। অর্থনীতিবিদ হয়ে গ্রামের সবার তাচ্ছিল্লের জবাব দিবে। ভাবতে ভাবতে অনেকসময় সে ঘুমিয়ে পড়ে। তার রুমমেট এসে তাকে জাগায়।

একদিন একটা চিঠি এল। চিঠিটা তার মায়ের লেখা। চিঠিতে তার মা লিখেছেন যে তার পক্ষে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ যোগান দেয়া সম্ভব নয়। তাকে এখন নিজের খরচ নিজেকেই চালাতে হবে। তার মাথায় যেন বাজ পড়ল। অর্থাভাবে তার অর্থনীতি পড়ার স্বপ্নই না আজ ভেস্তে যায়! তার রুমমেট তার দিকে তাকাল, বলল, "কোনো সমস্যা নাকি, দোস্ত? থাকলে খালি আমাকে বল্‌। নিমিষেই সমাধান করে দেব।"
ফ্রেড হাসি হাসি ভাব করে বলল, "না, কোনো সমস্যা নাই। বাড়ীর কথা মনে পড়ছিল- এই আর কি!"
প্রকৃত ঘটনা সে নিজের কাছেই রাখল।

একদিন, দুইদিন, তিনদিন- এভাবে সারা মাস চলে গেল। কিন্তু ফ্রেড কোন টিউশনি বা পার্ট-টাইম চাকরী পেতে ব্যর্থ হলো। অবশেষে সে তার রুমমেট ড্যানকে সব কিছু খুলে বলল। তার বন্ধুবর বলল, "ও, এই তাহলে ঘটনা। আমাকে আগে বলবি তো। আমার সাথে চল, আমি তোর ব্যবস্থা করছি।"
ড্যান তাকে নিয়ে গেলো এক ভদ্রলোকের কাছে। লোকটির মুখে দাঁড়ি ভর্তি। সব চুল সাদা। চোখে কালো চশমা।
ড্যান তার কাছে গিয়ে বলল, "এই সেই রুমমেট যার কথা আমি আপনাকে বলেছিলাম।"
লোকটি ফ্রেডকে লক্ষ করে বললেন, "বস বাবা, বস।" তিনি তার দিকে একটা চেয়ার এগিয়ে দিলেন।
ফ্রেড সন্দেহসূচক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল।
লোকটা ফ্রেডের দিকে তখনো স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়েই ছিলেন। ফ্রেড বসতেই তিনি বললেন, "আমার মনে হয়না যে তুমি আমাকে চেন না। তবুও বলছি: আমার নাম জন জ্যাকব। আমি এদেশের একজন রাজনৈতিক নেতা, যে কিনা নির্যাতিত-নিপীড়িতদের কথা বলে; মেহনতি মানুষদের পাশে থাকে। এবং আমার গড়া দল 'জনফ্রন্ট' এর ছাত্র সংগঠন এদেশের বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন।"
"আমি জানি", সংক্ষেপে বলল ফ্রেড।
"তুমি কি জান, ছাত্র সংগঠন মানে কি?" বললেন জন।
"ছাত্র সংগঠন মানে হলো ছাত্রদের নিয়ে গঠিত সংগঠন, যার প্রধান কাজ হলো ছাত্রদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করা, দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার তথা ছাত্রদের মাঝে নেতৃত্বের গুণাবলীর বিকাশ ঘটানো - ইত্যাদি।" জবাব দিল ফ্রেড।
-"তুমি তো তাহলে সব কিছুই জান এবং বোঝ দেখছি। তাহলে তুমি ছাত্র রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে রাখ কেন?"
-"কারণ এটা হলো একটা ছাত্র সংগঠনের সংজ্ঞা মাত্র। বাস্তবতার সাথে এর বিস্তর পার্থক্য।"
-"তাই নাকি?"
-"হ্যাঁ।"
-"যেমন?"
-"যেমন- বেশ কিছুদিন আগে আপনাদের সাথে আরেক ছাত্র সংগঠনের বিশাল এক কলহ হয়ে গেল। এটা তো ছাত্র সংগঠনের বৈশিষ্ট্য নয়।"
-"তা তুমি ঠিক বলেছ। কিন্তু কেউ যদি তোমাকে আঘাত করে মেরে ফেলতে চায়, তখন তুমি কি করবে? ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে?"
-"অবশ্যই না। কিন্তু এর সাথে ছাত্র সংগঠনের সম্পর্ক কোথায়?"
"আছে, আছে, সম্পর্ক আছে। এটা ঠিক যে, ছাত্র সংগঠনের উদ্দেশ্যের মাঝে কোলাহল ও অন্তর্দ্বন্দ্ব পড়ে না। তথাপি, সকল সংগঠন আসলে এই আদর্শের মাঝে থাকতে পারে না। আর যারা পারে না, তাদের সংগঠনে কোলাহল ও অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা যায়। আর তারা অনেক সময় শত্রুতাবশতঃ অন্য আদর্শবাদী দলের ক্ষতি করতে চায়। আর তখন সেই আদর্শবাদী দলটাকে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়।" বলে একটু থামলেন জন। তারপর বললেন, "থাক ওসব কথা। একদিন নিশ্চয়ই বুঝতে পারবে। এখন কাজের কথায় আসা যাক।" বলে জন একটু কেশে গলাটা পরিষ্কার করেনিলেন। বললেন, "তোমার একটা টিউশনির ব্যবস্থা হয়ে গেছে। ড্যান তোমাকে সবকিছু বলে দেবে। আর একটা কথা সব সময় আদর্শের মধ্যে থেক। যদি তুমি তোমার আদর্শ থেকে দূরে সরে আস, তবে তোমার ধ্বংস নিশ্চিত।"