WordGrid Game is on GitHub

WordGrid Game was the first ever project I worked on. The idea of the project came form my elder brother who just got admitted into BUET. He had to submit a project in the university which will be written in C with graphics based on a header file created by one of the teacher of BUET. He and one of his partner decided to give life to a very popular game played by primary students which they named 'WordGrid Game'. It is a game played usually by two players. The game is very simple:
There will be a grid (may contain unlimited number of rows and columns) where players can only fill one field at a time. First a player began by putting a letter in any field. The other user have to figure out a word that can be made out of the letter(s) in the field in addition with another word that he can input. If he inputs a letter and the letter & the previous letter(s) of the same row (right to left) or column (top to bottom) makes a meaningful word, the user will get point(s) according to the length of the word. When all the fields are filled, the game summery should be made and he who gets more points wins.
They were successfully able to made this game although it lacked many features and words. (They once used Oxford's 3000 words but unluckily they lost the project folder).
Anyway, it encouraged me to make a similar program using PHP, HTML and JavaScript. So, I wrote this program at that time (2012-2013). Now I have rewrote this program (well, I was only a beginner in PHP at that time) and transform it into OOP and made it open source under MIT license.
WordGrid Game Title Page
To fork, download or clone visit: https://github.com/MuntashirAkon/WordGrid

পুরনো মানচিত্রে মিঠাপুকুর

মিঠাপুকুর (Mithapukur) বাংলাদেশের একটি অন্যতম থানা এবং উপজেলা।

কথিত আছে যে, মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব সিংহাসনে আরোহন করার পর পরই মির জুমলাকে আদেশ দেন আসাম এবং কোচ বিহার দখল করতে। মির জুমলা তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে বর্তমান মিঠাপুকুর মহাবিদ্যালয়ের পেছনে ক্যাম্প স্থাপন করেন। এ সময় তার ক্যাম্পের সৈন্যরা পিপাসার্ত হয়ে পড়লে মির জুমলা পুকুর খুড়তে আদেশ দেন। তিনি পুকুরের পানির মিষ্টতায় মুগ্ধ হয়ে এ এলাকার নাম দেন মিঠাপুকুর। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, শাহ ইসমাইল গাজীই সর্বপ্রথম পুকুরটি খুড়তে আদেশ দেন। তবে যে যাই বলুক না কেন মিঠাপুকুর নামের উৎস যে ওই পুকুরটি - তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মিঠাপুকুর নামটি বৃটিশ আমলের বিভিন্ন মানচিত্রে স্থান পেয়েছে। তবে মানচিত্র সম্পর্কে যথাযথ ধারণা না থাকলে মিঠাপুকুরের নাম খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হতে পারে। নিচে কয়েকজন বিখ্যাত মানচিত্রকারকের তৈরী করা মানচিত্র দেয়া হল যেগুলোতে মিঠাপুকুরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মানচিত্রগুলো দেখার আগে বলে নেয়া ভালো যে, বৃটিশরা মানচিত্র তৈরী করার সময় যে জায়গার নাম যা শুনেছে ঠিক তাই লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু তাদের সাথে আমাদের ভাষা ও উচ্চারণগত পার্থক্য থাকার কারণে তারা আমাদের কথাগুলোকে যখন উচ্চারণ করার চেষ্টা করেছে তখন সেগুলো অনেকটা বিকৃত হয়েছে। ফলে বিভিন্ন সময়ের মানচিত্রে বিভিন্ন নাম উঠে এসেছে। যেমন ধরা যাক, রেনেল সাহেব যখন নিজে মানচিত্র এঁকেছিলেন তখন তিনি মিঠাপুকুরের নাম দিলেন Mettypokra কিন্তু যখন তিনি আরো দুই ভদ্রলোক, ডুরি এবং অ্যান্ড্রু -এর সাথে মানচিত্র বানালেন তখন মিঠাপুকুর হয়ে গেল Mettypukre. আবার যুগ বদলের সাথে সাথে ইংরেজরা নামও পালটিয়েছেন। যেমন ধরুন, ১৭৭৬ সালে (নিচের ছবিতে সালটা ভুল দেয়া আছে) ডুরি কিংবা রেনেল মিঠাপুকুরকে বলেছিলেন Mettypukre বা Mettypokra. আবার বার্থলোমিউ তার মানচিত্র (১৯২২)-এ বলেছিলেন Mitapokhar পরের মানচিত্রে (১৯৫৪) Mitapukur এবং বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এখনও কোথাও কোথাও মিঠাপুকুর এর রোমানাইজড নাম Mithapukur না লিখে Mitapukur বা Mitāpukur লেখা হয় (বিশ্বাস না হলে গুগলে সার্চ করে দেখতে পারেন)।

[যারা নীচের মানচিত্র গ্যালারি দেখতে পাচ্ছেন না, তারা এই লিঙ্কে যান]

অসম্ভবঃ আট

জনের কথায় রাজী না হয়ে আসলে তার আর কোনো উপায় ছিল না। তাই অবশেষে সে বেলকে গ্রামে রেখে এল। যে গ্রামে সে আর কখনো ফিরে যেতে চায়নি সেখানেই তাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও যেতে হল। তবে গ্রামে গিয়ে সে চাচার বাড়ী থেকেই বের হয়নি। তার চাচারা বেজায় ভালো মানুষ, গ্রামের সহজ সরল মানুষ বলতে যা বোঝায় আর কি! না হলে জনের কথায় তারা এত সহজে রাজী হয়! জনের নাতি বেল খুবই নিরব প্রকৃতির ছেলে। এ বয়সে এমন স্বভাবের ছেলে তেমন একটা দেখা যায় না। ফ্রেডের সাথে গ্রামে গিয়ে সে আরো নিশ্চুপ হয়ে গেছে। চাচার বাড়ীতে ফ্রেড আগে যে রুমে থাকত সেখানেই বেলকে থাকার জায়গা দেয়া হয়েছে। মাত্র ৫ বছরের একটা ছেলে একা একটা ঘরে কীভাবে থাকবে সেটা নিয়ে অবশ্য চাচাদের মাঝে বেশ পরামর্শ চলেছে। কিন্তু বেলের স্বভাব ও আচরণ দেখে তারা বুঝল, এ ছেলেকে নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই।
ভার্সিটিতে ফিরে এসে ফ্রেড যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। তাই তো সে জানালা দিয়ে বাইরের তুষার ঢাকা প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে থাকার ভান করে জীবনের সুখস্মৃতিগুলো স্মরণ করছিল।
জীবনের সুখস্মৃতিগুলো যেন কেমন, এদের স্মরণ করলে মনের মধ্যে কেমন যেন একটা ভাবের উদয় ঘটে, জীবনের দৃশ্যপট যেন মুহূর্তেই বদলে যায়। তবে দুর্ভাগ্যই বলা চলে, এই ভাব বেশীক্ষণের জন্য স্থায়ী হয় না। কেন স্থায়ী হয় না - তা একটা বড় প্রশ্ন বটে। সম্ভবতঃ জীবনের কঠিন বাস্তবতা এই ভাবকে তার প্রতি তাচ্ছিল্য মনে করে দূরে সরিয়ে দেয়, অথবা কোনো অলীক কারণও থাকতে পারে যা হয়তো মানবজাতির কাছে এখনো পরিষ্কার নয়। সুখস্মৃতিগুলোকে স্মরণ করতে করতে ফ্রেড যে কখন ভাবনার রাজ্যে চলে গিয়েছিল বুঝতে পারল না।
ফ্রেড তার দৃষ্টি জানালা থেকে সরিয়ে এবার তার রুমে নিবদ্ধ করল। দেখল, ড্যান তার দিকে চেয়ে আছে। সম্ভবতঃ সে গভীরভাবে তাকে পর্যবেক্ষণ করছিল। তার দিকে তাকাতেই সে জিজ্ঞেস করল, 'কি ব্যাপার এত তাড়াতাড়ি ফিরলে যে?'
- বাসায় ভাল লাগছিল না।
- কেন? বাসায় কোন সমস্যা হয়েছে নাকি?
- না, এমনিতেই ভালো লাগছিল না।
ফ্রেডের মুখের দিকে তাকিয়ে ড্যান আর কিছু বলল না।
ফ্রেড উঠে দাঁড়াল। এরপর জ্যাকেটটা হাতে নিতে নিতে ড্যানকে লক্ষ করে বলল, 'আমার এখন একটা ক্লাস আছে। পরে কথা হবে।'
কথা শেষ করে সে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।


জন তার অফিসের চেয়ারে বসে ভাবছিল তার জীবনের অতীত, বর্তমান ও সম্ভাব্য ভবিষ্যতের কথা, এক দেশ ও এক জাতিকে টিকিয়ে রাখতে তার পরিবারের নিঃস্বার্থ কুরবানীর কথা। কিন্তু তার চোখ সীমাহীন ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পারছিল না। অবশেষে সে নিজেকে সান্তনা দেবার চেষ্টা করল এটা ভেবে যে, জনগণের সাথে একটা পরিবার কি করে পারবে? সবাই তো তথাকথিত স্বাধীনতা চাচ্ছিল। কি করে তাদেরকে স্বাধীনতা অর্জন থেকে বিরত রাখা যাবে? কি করে তাদেরকে একথা বুঝানো যাবে যে, যে স্বাধীনতার জন্য তারা আন্দোলন করছে তা আসলে আরেক পরাধীনতার দরজা মাত্র? সুখ জিনিসটা মানুষ এত চায় অথচ যখন তা মানুষের কাছে ধরা দেয় তখন মানুষ তাকে সুখ বলে কেন যে চিনতে পারে না - তা জনের মাথায় আসে না। হতে পারে মানুষ আসলে মন থেকে সুখ চায় না অথবা এও হতে পারে যে, সুখ আসলে নিছক কল্পনা মাত্র।
জীবনের অনেকটা সময় জন পার করে এসেছে কেবল স্বপ্ন দেখে; তখন আবশ্য সে এতকিছু ভাবেনি। তখনো তো সে একজন নব্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিল মাত্র। আর এখন সে একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। এখন সবাই তাকে সম্মান-শ্রদ্ধা করে। সে ভাবে, তার মনের কথাগুলো যদি মানুষ জানত বা বুঝত তাহলে কতকিছুই না হতে পারত। একটা দেশের প্রধান হয়েও নিজের অপারগতার কাছে সে কত অসহায়! কিন্তু একথা সে ছাড়া আর কেউ জানতেও পারে না কিংবা পারে না বুঝতেও।
মানুষ বড়ই অদ্ভুত প্রজাতির, ভাবে জন। দুই দিনের পরিচয়েই তারা মনে করে তারা একে অপরকে চিনে ফেলেছে, অথচ একটা সময় আসে যখন বুঝতে পারে তাদের এ ধারণা সত্যি ছিল না। তারা নিজেদেরকে আবার নতুন করে চিনতে শেখে কিন্তু আবারো একই ভুল করে। এত এত যুগ পার হলো কিন্তু মানুষের এই প্রাচীন অভ্যাসের কোনো পরিবর্তন এল না।
জনের পিএস তার কক্ষে প্রবেশ করল। তার হাতে একটা চিঠি। চিঠিটা জন হাতে নিয়ে উল্টে-প্লাটে দেখল। চিঠিতে কোনো প্রেরকের নাম লেখা নেই। কিন্তু হাতের লেখা দেখে বুঝতে পারল চিঠিটা তার ছেলের লেখা।
চিঠি পড়ে জনের হতাশা আরও বেড়ে গেল মনে হল। সে অনেকদিন থেকে অবসরের কথা ভাবছিল; কিন্তু পরিস্থিতি মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে। একজন যোগ্য উত্তরসূরি ছাড়া যার তার কাছে ক্ষমতা যাওয়া মানে দেশের বারোটা বাজানো। তার মনে বড় আশা ছিল ছেলেকে সে দেশের রাজনীতিতে প্রবেশ করাবে। কিন্তু ছেলের ইচ্ছা দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়ানো। সে আর না করেনি। তবে মনে মনে সে বড্ড হতাশ হয়েছিল। তাদের পরিবারের এতদিনের রাজনৈতিক ইতিহাসের সমাপ্তি তাকেই রচনা করতে হবে মনে হলে খুবই খারাপ লাগে তার। বড়ই ক্লান্ত সে, অথচ তার সামনে রাজ্যের কাজ পড়ে আছে।
চিঠিটা টেবিলে রেখে রিভলভিং চেয়ার ঘুরিয়ে পেছনের জানালার দিকে মুখ করে বসল। বাইরের প্রকৃতিতে শীত তার মনকেও যেন স্পর্শ করল। কোন চিরসবুজ গাছের পাতা আজ আর দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না, ক্রান্তীয় পাতাহীন গাছগুলোকে অনেকটা ক্যাকটাসের মতো লাগছে। চারদিকে সাদা তুষার ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছে না। সাদা তুষারের দিকে এক দৃষ্টতে তাকিয়ে থাকলে মাথা কেমন ঝিম ঝিম করে, চোখে ক্লান্তি নেমে আসে। শান্ত, নীরব এ প্রকৃতি যেন জনের দীর্ঘজীবনের ক্লান্তিকর মুহূর্তগুলোকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। চোখ ফিরিয়ে নিল জন। হেলেপড়া সাদা সূর্যের মতো সেও যেতে চায় শেষ দিগন্তে; কিন্তু অসীম এ সৃষ্টি জগতে সে দিগন্তের দেখা সর্বদা মেলে না। আর যেদিন মেলে সেদিন সবকিছু ছেড়ে পাড়ি দিতে হয় অজানা পথ। মুহূর্তে গা শিউরে উঠল জনের। সে এ পথ পাড়ি দিতে কতটা প্রস্তুত?

অসম্ভবঃ সাত

দেখতে দেখতেই ছুটি ফুরিয়ে এল। এখন গোটা হল আবার ভর্তি। ড্যানও এসেছে; কিন্তু তার মন খারাপ। ফ্রেড কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলে যে তার সমস্যাটা পারিবারিক। ফ্রেড আর কিছু বলেনি, হতে পারে তার পারিবারিক সমস্যাটা অনেক বড় এবং তাকে বলার মতো নয়। সে নিজেও তো অনেক পারিবারিক ব্যাপার গোপন করে।
পৃথিবীটাকে অনেকসময় অনেক ছোট মনে হয় ফ্রেডের কাছে। একসময় সে কত স্বপ্ন দেখত! কিন্তু আজ নানা ঘটনার ঘনঘটায় এবং বিচিত্র ও নতুন নতুন অভিজ্ঞতায় সে স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে, হারিয়ে ফেলেছে অনুভূতিও। মাঝে মাঝে তার মনে হয় - সে কি আসলেই একজন মানুষ? যদি সে মানুষ হয়েই থাকে তবে মানুষের সংজ্ঞা কি দাঁড়ায়? আর মনুষ্যত্ব? সেতো মানুষদের নিজেদেরই তৈরী করা একটা মতবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। নাহ, সে তো আর দর্শনের ছাত্র নয়, সে হলো অর্থনীতির ছাত্র, তার এসব জিনিস মাথায় আসবে না - এটাই তো স্বাভাবিক! তার মনে পড়ে ভার্সিটি জীবনের প্রথম দিকের দিনগুলির কথা, যখন সে স্বপ্নের মাঝে বিচরণ করতো, একদিন সে বড় হবে, তার গ্রামের মানুষদের সমালোচনার জবাব দেবে ইত্যাদি, এবং এসব স্বপ্ন দেখতে দেখতে তার ঘুমিয়ে পড়ার কথা। সত্যি বড় অদ্ভুত এ জীবন! কয়েক মাস আগেও তার কাছে স্বপ্নগুলো বেশ জীবন্ত মনে হতো, অথচ কয়েক মাসের ব্যবধানে এ স্বপ্নগুলো তার কাছে অন্তঃসার শূন্য মনে হতে লাগল! জন তাকে একবার বলেছিলেন যে জীবন নাকি অনেকগুলো পর্যায়ে বিভক্ত এবং প্রতিটি পর্যায়েই মানুষ জীবনকে নতুনভাবে চিনতে শেখে। হয়তো তার কথা ঠিক, হয়তো সে নতুন কোনো এক পর্যায়ে এসে হাজির হয়েছে।
ফ্রেড তার ঘরের জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতির দিকে তাকাল। প্রকৃতিতে শীতের আমেজ নেমে এসেছে, প্রকৃতি শুভ্র রং ধারণ করতে শুরু করেছে। তার চোখ এবার চলে গেল আকাশের দিকে। আকাশে আজ একটি মাত্র চাঁদ। চাঁদটি যেন একাকীত্বের প্রতীক হয়ে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সন্ধা নেমে আসছে, তারাগুলো চাঁদকে সঙ্গ দেবার চেষ্টা করছে, কিন্তু চাঁদ তাদের দিকে তাকায় না, হয়তো এ নিঃসঙ্গতাকে সে ভালোবাসে বলেই এমনটা করে অথবা তার জীবনে সে একাকী থাকবার সু্যোগ খুব কম পায় বলে আজ একটু একাকী থাকার চেষ্টা করছে।
ফ্রেড চোখ নামিয়ে নিল।
আগামীকাল জন তাকে ডেকেছে। তবে কারণ উল্লেখ করেনি, সে অবশ্য জিজ্ঞেস করার কৌতুহলও বোধ করেনি। অদ্ভুত মানুষ এই জন। দেখে কারো মনেই হবে না এই লোকটার ক্ষমতা কতটুকু হতে পারে।
নাহ, একটু পড়া দরকার, ভাবল সে। টেবিলে উল্টো করে রাখা বইটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করল সে।
বাইরে চাঁদের আলোয় তুষার কণাগুলো জ্বল জ্বল করছে, আর আকাশের তারাগুলো যেন সেদিকে তাকিয়ে অবিরত নাচছে। শীতল এ মহাবিশ্বের কলঙ্কস্বরূপ তারাগুলো তুষার খুব কমই দেখতে পায়।


পরদিন সকালবেলা।
আজ আবার সেই পিটারসন পার্কে বসে আছে ফ্রেড। এখানেই জনের সাথে তার দেখা হবার কথা। গোটা পার্ক আজ সাদা রং ধারণ করেছে। শীতকালে সে কখনো খোলা কোনো স্থানে যায়নি, যদিও বা তার বাড়ি গ্রামে। জীবনে প্রথমবারের মতো নিজেকে তুষার ঢাকা ময়দানের মাঝে আবিস্কার করে ঠিক কেমন লাগছে, সে বুঝতে পারে না। এখনও শীত তেমন পড়েনি। তাই তুষারের স্তর খুবই পাতলা, দেখে মনে হয় সবকিছুর ওপর যেন চুনের আস্তরণ পড়ে আছে।
ঠিক সময়মত এবং পূর্বের মতো ঠিক পশ্চিম দিক দিয়েই এল জন। তার মুখে আজ হাসি নেই। মুখটি মলিন আর আজকের প্রকৃতির মতোই ফ্যাকাশে। ফ্রেড অভ্যাসমত আজও উঠে দাঁড়াল। জন হাসি টানার চেষ্টা করে বলল, "বস, বস।"
ফ্রেড বসল। বসল জনও।
একটু পর জন বলল, "আমি আজ তোমাকে এখানে ডেকেছি একটা ব্যক্তিগত কারণে, যা তুমি ছাড়া আর কেউ এমন কি ড্যানও জানবে না।"
ফ্রেড এতক্ষণ হেলান দিয়ে বসেছিল। জনের কথায় সে একটু নড়েচড়ে বসল। ভাবল, জনের আবার এমন কি গোপন কথা থাকতে পারে যা কিনা এমনকি ড্যানকেও বলা যাবে না!
জনই আবার মুখ খুলল, "তুমি হয়তো শুনে থাকবে মাস্কারাসদের ধ্বংস করার পর প্রতিটি রাজ্যের সব গভর্নরদের নিয়ে একটি শান্তি বৈঠক করা হয়।"
-"জ্বী। ৩০৪৭ সালের ২৩ আগস্ট।"
-"তা ঐ বৈঠকে প্রস্তাব করা হয় যে মাস্কারাসদের ব্যবহৃত কোনো অস্ত্র মানুষ ব্যবহার করবে না; বরং সব অস্ত্র ধ্বংস করে ফেলা হবে। এ বৈঠকে সকলে এ ব্যাপারে একমত হয় এবং ২ সেপ্টেম্বর সকল অস্ত্র একত্রে জমা করে ধ্বংস করা হয়। সে হিসেবে আর তো কোনো অস্ত্র থাকার কথা নয়। কিন্তু তিনদিন আগে আমার ছেলের কাছ থেকে জানতে পারলাম সব অস্ত্র ধ্বংস করা হয়নি। ঐ সময় ইলি নদীর ওপারের দুই রাজ্য, আময়ডেন ও এলবানডোর, গোপনে কিছু অস্ত্র তাদের গোপন অস্ত্রাগারে রেখে দেয়। আজ প্রায় তিনশ বছর পর একটা রিসার্চ টিম পুরনো সামরিক ঘাঁটি নিয়ে রিসার্চ করার সময় ঐ অস্ত্রগুলো উদ্ধার করে। কিন্তু তারা এটা ওই দুই রাজ্যের সরকারের নির্দেশে গোপন রেখেছে। ঘটনাক্রমে আমার ছেলে ওই সময় আময়ডেন-এ ছিল। আময়ডেনের স্বরাষ্টমন্ত্রীর সাথে তার খাতির থাকায় সে এ ঘটনা জানতে পারে। শুধু তাই না তারা এসব অস্ত্র কীভাবে ব্যবহার করতে হয় সে ব্যাপারে তারা আজ দুই বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে বের করেছে। এখন তারা তা সামরিক কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছে।"
বলে থামল জন। ফ্রেড বুঝতে পারছে এসব কথা জন কেন তাকে বলছে।
জন আবার বলা শুরু করল, "তুমি হয়তো মনে করছ, কেন তোমাকে এসব কথা বলছি। তবে আরেকটু ধৈর্য্য ধরে শোন। তো, আমার ছেলে নাকি এ ঘটনা জানতে পেরেছে অনেক আগে। কিন্তু বলার প্রয়োজন বোধ করেনি। কিন্তু দিন কয়েক আগে আময়ডেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব গোপন কথা অনেকের কাছে ফাঁস করে দেবার অপরাধে গ্রেফতার হন। জেরাতে তিনি কাকে কাকে এ ঘটনা ফাঁস করেছেন তা বলে দেন এবং এতে আমার ছেলের নামও আসে। তিনদিন আগে আমার ছেলে আময়ডেনে যেখানে থাকে সেখানে আময়ডেনের সামরিক বাহিনী গোপনে আমার ছেলেকে গ্রেফতার করতে যায় কিন্তু ঘটনাক্রমে সেদিন সে সেখানে ছিল না বলে বেঁচে যায়। পরে এ ঘটনা জানতে পেরে সে আমাকে সবকিছু জানায় এবং আমাকে এবং তার ছেলেকে সাবধানে থাকতে অনুরোধ করে।"
থামল জন। ফ্রেড তাকে ডাকার উদ্দেশ্য এবার বুঝতে পারল। সে বলল, "তাহলে আপনি চাচ্ছেন আমি যেন আপনার নাতিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেই, যেখানে তাকে কেউ চিনবে না।"
-"অনেকটা সেরকমই। তোমার চাচার সাথে এ ব্যাপারে আমার কথা হয়েছে।"
-"কিন্তু এতে তো আমার পড়াশুনার ব্যাঘাত ঘটবে।"
-"না, তুমি তো আর বেলের সাথে থেকে যাচ্ছ না। তুমি শুধু বেলকে তোমার গ্রামে নিয়ে গিয়ে তাকে গ্রামের লোকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে যাতে সে ভয় না পায়।"
-"কিন্তু এতে আপনি আমাকে জড়াচ্ছেন কেন?"
-"কারণ বেল তোমাকে চেনে। তাকে এখন যদি অচেনা কোনো লোকের সাথে থাকতে বলি সে রাজি হবে না কিংবা জোর করেও যদি থাকতে বলি তাহলে হয়তো সে ভয় পাবে। আর তাছাড়া নিরাপত্তার কিছু ব্যাপারও আছে। আমি প্রত্যহ যাদের সাথে চলাচল করি এরা সবাই কমবেশি সুবিধাবাদী। যখন যে সরকার তখন সে সরকারের গোলামী করাই তাদের অভ্যাস। কাজেই এদের উপর ভরসা করা যায় না। আর বাকী যারা বন্ধু-বান্ধব আছে তাদের বাড়িতে থাকা নিরাপদ নয়। কারণ সামরিক বাহিনী বেলকে খুঁজতে এলে সবার আগে তাদের বাড়িতেই খোঁজ নেবে। তাই সবদিক বিবেচনা করে আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তোমাদের বাড়িতে বেল থাকলে কেউ তাকে সন্দেহ করবে না কিংবা বেলও ভয় পাবে না।"
-"কিন্তু সবাই তো জানে যে আমি আপনার নাতিকে পড়াই।"
-"না, ড্যান ছাড়া একথা আর কেউ জানে না। একজন নেতাকে নিজের নিরপত্তার জন্য ব্যক্তিগত জীবনের অনেককিছু গোপন করতে হয়। আমি ড্যানকে বুঝিয়ে বলব যেন সে একথা কাউকে না বলে। যা হোক, আগেই বলেছি তোমার চাচার সাথে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন যদি তুমি রাজী থাকো তাহলে তিনিও রাজী। এখন বল তোমার অভিমত কি?"
ফ্রেড ভেবে পায়না কি বলবে। তার সামনে তেমন কোনো বিকল্পও নেই। তবু সে বলল, "এ ব্যাপারে আমাকে ভেবে দেখতে হবে।"
"আমার হাতে সময় খুবই কম। তবু ভাবনার জন্য তোমাকে একদিন সময় দিলাম। কালকে ঠিক এই সময়ে এই স্থানে উপস্থিত থেকো।"  বলে জন উঠে দাঁড়াল। তারপর ফ্রেডের দিকে তাকিয়ে বলল, "আমি হয়তো তোমার কাছে একজন খারাপ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, কিন্তু বেল একটা নিষ্পাপ ছেলে। তার সামনে পুরো জীবনটাই পড়ে আছে এবং এ জীবনে তার নিজের চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলবার অধিকারও তার আছে। আশা করি বিষয়টা ভেবে দেখবে।"
কথা শেষ করে জন তার ডান হাত দিয়ে ফ্রেডের বাম কাঁধ বুলিয়ে যেদিক দিয়ে এসেছিল ঠিক সেদিক দিয়েই গেল। ফ্রেড সেদিকে চেয়ে থাকল।

অসম্ভবঃ ছয়

জনের নাতিকে ফ্রেড পড়ায় প্রায় চার-পাঁচ মাস হয়ে গেল, অথচ এর মাঝে একদিনও জনের সাথে তার দেখা হয় নি! প্রতিদিনের মতো আজও সে জনের নাতিকে পড়িয়ে বসার ঘরে বসে ছিল। এমন সময় ঘরে প্রবেশ করল জন। জনকে দেখে ফ্রেড উঠে দাঁড়াল। জন বলল, "বস, বস, আমার মতো একজন অধমকে দেখে দাঁড়ানোর কোন মানেই হয় না।" ফ্রেড বসে পড়ল। জন আবার বলল, "তা আমার নাতিকে কেমন দেখলে?" "ভালই। পড়াশুনায় তার বেশ আগ্রহ।" জবাব দিল ফ্রেড।
- "তোমার দিনকাল কেমন যাচ্ছে? শুনলাম এবার নাকি ছুটিতে বাড়ি যাওনি?"
- "জ্বী, নানা ব্যস্ততার কারণে যাওয়া হয়ে ওঠেনি।"
- "আচ্ছা, তোমার আর কোনো ভাই-বোন নেই?"
- "না, আমি আমার মায়ের একমাত্র সন্তান।"
- "তোমার মা কি গ্রামেই থাকেন?"
- "জ্বী।"
- "তোমার মা গ্রামে একা কীভাবে থাকেন?"
কথা বলল না ফ্রেড। কিভাবে সে জনকে নিজের মনের কথাগুলো বলবে? জীবনে সে অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে আজ এতদূর এসেছে। আর এসময় তার পাশে বন্ধুর মতো পাশে থেকেছে তার মা। সে বাবার মুখ দেখেনি, তার চাচারা ছাড়া আর সবাই তাকে আর তার মাকে পরিত্যাগ করেছিল। কিন্তু তাতেও ফ্রেডের কিছু যায় আসেনি। একজন এতিম ছেলের মা-ই তার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু কে জানত একদিন তাকে তাও হারাতে হবে!
ফ্রেডের নীরবতা ছিল লক্ষ করার মতো। জন বলল, "একটা সময় ছিল যখন আমি প্রতিদিন গ্রামে যেতাম শুধুমাত্র গ্রামের প্রকৃতি দেখার জন্য। এটা নিয়ে আমার ভাইরা আমার সাথে টিটকারি করত। বাবাও আমাকে নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন। বাবার ইচ্ছা, আমি যেন একজন বড় উকিল হই। তিনি বড় ছেলেকে তার মতো পলিটিক্সের সাথে জড়িত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের জোরে আমিই হলাম রাজনীতিবিদ আর সে হলো উকিল। আমি তখনো ভাবিনি জীবনে বড় হয়ে ঠিক কি করব। জীবনের লক্ষ্য বলে যে কিছু আছে, তখন তা মাথাতেই আসত না। যখনই সময় পেতাম গ্রামে যেতাম, আর অপলক চোখে তাকিয়ে থাকতাম প্রকৃতির দিকে। যখন হাইস্কুলে উঠলাম তখন চারিদিকে হঠাৎ ভাঙনের ধ্বনি শুনতে পেলাম। একে একে সব রাজ্যগুলো ভাগ হতে লাগল। বাবা অনেক চেষ্টা করেও মন্ত্রীসভাকে টিকিয়ে রাখতে পারলেন না, রাজ্যপ্রধানগণ একে একে নিজেদের পদত্যাগপত্র জমা দিতে লাগল অথবা নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে কেউ কেউ বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দিল। বাবা আমাদের সকলকে গ্রামে রেখে এলেন। আমরা তিনভাই আর মা - বেশ ভালই কাটছিল দিনগুলি। হঠাৎ একদিন গ্রামে আমার এক পরিচিত লোকের কাছে শুনতে পেলাম প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ বিদ্রোহীরা ঘিরে ফেলেছে। আমি দিক-বিদিক হারিয়ে রওয়ানা দিলাম রাজধানীর দিকে, যাবার সময় মা কিংবা ভাইদের বলার সুযোগও পেলাম না। রাজধানীতে গিয়ে শুনতে পেলাম, বাবা আর বেঁচে নেই। বাবাকে শেষ বারের মতোও দেখার সুযোগ পেলাম না। আমি যখন প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছে গেলাম, তখন মিথুনিয়ার তৎকালীন ও শেষ মেয়র আমাকে তাড়াতাড়ি করে তার বাসায় নিয়ে গেলেন। তিনি বললেন যে আমার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে যাওয়া মোটেও নিরাপদ নয়। তারা প্রেসিডেন্টকে মেরেছে, এখন তারা প্রেসিডেন্টের বংশ নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার পরিকল্পনা করেছে। আমি তাকে আমার মা ও ভাইদের কথা বললাম। তিনি একজন লোক পাঠিয়ে দিলেন আমার মা ও ভাইদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় নি। তারা আমার মা ও মেজভাইকে মেরে ফেলে। বড় ভাই পালিয়ে যায়। মাকেও শেষবারের জন্য দেখার সৌভাগ্য আমার হয়ে ওঠেনি। বড়ভাইকে প্রায় ১০ বছর ধরে খুঁজে বেড়িয়েছি, পাইনি।" একটা দীর্ঘশ্বাস নিল জন। "এটা আজ হতে প্রায় ৩০ বছর আগের ঘটনা। এই ৩০ বছরে কত পরিবর্তন এসেছে! আগে যে বাবা ছিলেন একজন দেশদ্রোহী, তিনি নিমেষে হয়ে গেলেন শহিদ। আদালত প্রায় জোর করে আমাদের এই পুরনো বাড়িটাতে আমাকে থাকার অনুমতি দিল। মিথুনিয়ার সাবেক মেয়রের অনুপ্রেরণায় আমি রাজনীতিতে প্রবেশ করি এবং আজ অবধি এ পথেই আছি। জীবনটা আসলে অনেক কমসময়ের জন্য। এখন বয়স চল্লিশ পার হয়ে গেলো। আর ক'দিনই বা বাঁচব! কম সময় হলেও বড় বিচিত্র এ জীবন! কত অভিজ্ঞতা, কত আনন্দ, বেদনা, কত পাওয়া, না পাওয়া! কিন্তু এ সবকিছুর পেছনে উদ্দেশ্য কি?" থামল জন।
জন থামলেও ফ্রেড কোন কথা বলল না। কি বলবে সে? বলার তো তার কিছুই নেই। সে এতদিন ভাবত যত দুঃখ-বেদনা সব যেন শুধুই তার। কিন্তু তার এ দাবী যে মোটেও সঠিক নয় তা সে আজ বুঝতে পেল। এ জীবনের কী উদ্দেশ্য? - অন্য সবার মতো তারও মাঝে এ প্রশ্ন খেলা করে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষের মত সেও ভুলে যায় কোন জগতে সে বাস করছে।
আজ পিটারসন মেমোরিয়ালের পাশ দিয়ে যাবার সময় ফ্রেড পুলারের লেখা বই "হারানো স্বাধীনতা"র প্রথম খণ্ড কিনে নিয়ে গেল। জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানার জন্য বোধ হয় এর চাইতে কোনো ভাল বই এ গ্রহে নেই।

অসম্ভবঃ পাঁচ

ডায়রী লিখতে বসেছে ফ্রেড। ডায়রী লেখার অভ্যাসটা ফ্রেডের আগে ছিল না। মাস দুয়েক আগে কেন জানি তার মনের মধ্যে উদয় হলো যে ডায়রী লেখা দরকার। ব্যাস, অমনি বাজার থেকে একটা ডায়রী কিনে নিয়ে এলো সে। সপ্তাহ দুয়েক থেকে তার কলেজ বন্ধ: "শরৎকালীন অবকাশ"।
অনেক চেষ্টা করেও সে আজকে কি বার - তা বের করতে পারল না। ভাবল, ড্যানকে জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো তার যে ড্যান বাড়ি চলে গেছে। আসলে, সবাই বাড়ি চলে গেছে, শুধু সে একাই আছে। যেন গোটা হল কয়েকদিনের জন্য তার নিজের হয়ে গেছে। হঠাৎ নিজেকে বড্ড একা মনে হলো তার। মনে পড়ল তার মায়ের কথা, কতদিন থেকে যে সে বাড়ি যায় না - তার হয়তো কোনো সঠিক হিসেব সে দিতে পারবে না। কেনই বা সে বাড়ি যাবে? ওই বাড়ি কি এখনো তার নিজের আছে? মাস ছয়েক আগে তার মা তাকে চিঠি পাঠিয়েছিল যে তিনি আর ফ্রেডের খরচ বহন করতে পারবেন না, কে জানত যে তা তিনি করেছেন নিজের ছেলেকে পর করার জন্য।
সত্য কথাটা ফ্রেড জানতে পেরেছে মাস চারেক আগে তার বড় চাচার মাধ্যমে: তার মা আরেকটা বিয়ে করেছেন। এটা শুনে একেবারে ভেঙে পড়েছিল সে। তার বাবা মারা যাবার পর দীর্ঘ প্রায় ১৩ বছর তার মা বিধবা থেকেছেন, এখন জীবনের শেষ সময়ে এসে তাঁকে কেন নতুন করে বিয়ে করতে হলো তা তার মাথায় আসে না। তিনি তো তার শ্বশুরালয়ে মন্দ ছিলেন না। তাঁকে তারা এমনকি রান্না করার কাজটিও করতে দিতেন না। মানুষ সত্যি নিজের সুখ বুঝতে পারে না। তার চাচা অবশ্য তাকে বলেছিল যে, সে চাইলে তিনি তাকে প্রতিমাসে টাকা পাঠাতে পারবেন। সে জবাব দেয় যে দরকার হলে সে অবশ্যই চাইবে। কিন্তু মনে মনে চিন্তা করে সে, কোন মুখে সে তার চাচার কাছে সাহায্য চাইবে যখন তার মা এমন একটি কাজ করে বসল।
ফ্রেড চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। আজ তার আর ডায়রী লেখা হলো না, যেতে হবে টিউশনিতে। জন অবশ্য বলেছিল যে চাইলে সে ছুটি নিতে পারে। কিন্তু সে ছুটি নেয়নি। ছুটি নিয়ে তার কি হবে? তার তো আর কোনো বাড়ি নেই। আগে তার মা রোজ তার কাছে চিঠি লিখত কিন্তু নতুন বিয়ের পর ওটাই ছিল তার শেষ চিঠি। একজন মা কি করে এমন পাল্টাতে পারে ফ্রেড বুঝতে পারে না।
তাড়াতাড়ি করে শার্টটা পাল্টিয়ে রওনা হলো সে। জগতের মানুষগুলো বড়ই অদ্ভুত। তারা শুধু ছুটছে আর ছুটছে, কিন্তু কোন দিকে ছুটছে, কেন ছুটছে, তা তাদের অনেকেরই অজানা। আর যে সামান্য সংখ্যক মানুষ জানে তারাও অনেকে না জানার ভান করে থাকে। মানবজাতির এ দুরবস্থার জন্য কষ্ট পায় ফ্রেড। ড্যান অবশ্য তাকে বলে যে শুধু কষ্ট পেলেই চলবে না, এ দুরবস্থা থেকে মানবজাতির মুক্তির জন্য কাজ করতে হবে। কিন্তু সে একা কীভাবে এতবড় দায়িত্ব পালন করতে পারবে? এজন্য তো প্রয়োজন দলবদ্ধ প্রচেষ্টা। এই কথাটা অবশ্য সে ড্যানকে বলে না, কারণ সবকিছুতেই রাজনীতিকে টেনে আনা ড্যানের একটা বদ অভ্যাস। হ্যাঁ, সে এটা নিজেও স্বীকার করে যে রাজনীতি ছাড়া দেশ অচল। কিন্তু তাই বলে তো আর সবখানে রাজনীতি চলে না! সব কিছুরই তো একটা সীমা থাকা উচিত। সে অন্ততঃ ছাত্রজীবনে রাজনীতি থেকে বিরত থাকবে - এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে যদিও ইদানিং তার ভয় হয় যে সে হয়ত ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বে। সে এ ব্যাপারে আরো সাবধান হতে চেষ্টা করছে।
না, আজকে তার বোধ হয় একটু দেরিই হয়ে গেল। সন্ধা নেমে আসছে, অথচ আজ তার যাবার কথা ছিল বিকেলে। আজই প্রথমবারের মতো সে পিটারসন মেমোরিয়ালের পাশ দিয়ে যাবার সময় পিটারসনের মূর্তির দিকে একবারও তাকাল না।