অসম্ভবঃ চার

জনের নাতিকে পড়িয়ে ফ্রেড কলেজের হোস্টেলে ফিরছে। জনের বাড়ীটা তার হোস্টেল থেকে বেশী দূরে নয়। সে ভেবে পায়নি জন এরকম একটি জায়গায় কিভাবে থাকার জায়গা পেল। পরে অবশ্য ড্যান তাকে বলেছে যে, জনকে ঐ বাড়ীতে থাকার অনুমতি তাকে আদালতই দিয়েছে। কেন দিয়েছে জিজ্ঞেস করলে ড্যান জবাব দেয় যে, এদেশের স্বাধীনতায় জনের বাবার বিশেষ ভুমিকা ছিল। তারই প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে আদালত তাকে ঐ বাড়ীতে থাকতে দিয়েছে। ফ্রেড বলে, জনের বাবা দেশের জন্য লড়েছেন, ভালো কথা; কিন্তু তার এই মহৎ কাজের জন্য তার পরিবারকে দেশের কেন্দ্রস্থলে থাকার জায়গা দিতে হবে - এটা তো ঠিক নয়। এর অর্থ কি এই দাঁড়ায় না যে, জন তার বাবার মহৎ কর্মকে নিয়ে ব্যবসা করছে অথবা রাষ্ট্র জনের বাবার মহৎ কর্মের মূল্য - যা কিনা কখনোই কোনো কিছু দ্বারা শোধ করার নয় - পরিশোধ করার চেষ্টা করছে? ড্যান জবাবে কোনো উত্তর দেয় না, চুপ করে থাকে সে। মানুষের চিন্তা-ভাবনাগুলো যখন খুবই স্বচ্ছ হয় তখন আসলে তাতে মৌন সম্মতি দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না, বিশেষ করে তা যখন শোনা যায় সাধারণ কোনো মানুষের মুখ থেকে। কয়েকমিনিট চুপ থেকে ড্যান বলে, সত্যি কথা বলতে কি, এই জগতে সবার দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়; বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নভাবে ও বিভিন্ন উপায়ে চিন্তা করে। তাই এই সমাজে যে একটা সামান্য ব্যাপারেও অনেক মত থাকবে - এটাই স্বাভাবিক। ফ্রেড বুঝতে পারে না ড্যান কি বোঝাতে চাচ্ছে। সে বলে, তা ঠিক। কিন্তু সমাজের কি উচিত নয় এসব দৃষ্টিভঙ্গির মাঝে সবচাইতে ভালো মতটি গ্রহণ করা? অবশ্যই, জবাব দেয় ড্যান। তবে এখানেও কিছু সমস্যা রয়েছে। সমাজ তো কোনো বিবেচক নয় যে সে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মতামতটি গ্রহণ করবে। বরং এটা সমাজের মানুষদের নিজেদেরই দায়িত্ব, অন্যকথায় বলা যায়, সমাজের নীতি-নির্ধারকদের দায়িত্ব। কিন্তু আমাদের সমাজের নীতি-নির্ধারকরা তা করছেন না। ড্যানের কথা শেষ হলে ফ্রেড বলে, হ্যাঁ, কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছ, তারা কেন এমনটি করছেন না? ভেবেছি, অনেক ভেবেছি, কিন্তু কোনো কূল পাইনি। হয়তো তারা নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয় বলেই এমনটা করে। জবাব দেয় ড্যান। স্বার্থ? হ্যাঁ, স্বার্থই এর পেছনে মুখ্য ভুমিকা পালন করে। এই জিনিসটা না থাকলে হয়তো এ জগৎ একটা সুন্দর জায়গায় পরিণত হত। এজগতে পাশাপাশি অবস্থান করেও একজন মানুষ আরেকজনকে চিনতে পারে না এই স্বার্থের কারণেই। বলে ফ্রেড। পিটারসন মেমরিয়ালের সামনে দিয়ে যাবার সময় প্রতিদিন তার এই একটি জিনিসই মনে হয়। কোনো এককালে এ জগতে বাস করতো এক ভয়ঙ্কর প্রাণী, তাদেরই মধ্য থেকে একজন এগিয়ে আসে তাদেরকেই ধ্বংস করতে সাহায্য করার জন্য, আর সেই ব্যক্তিটি ছিলেন পিটারসন। লোকটির ছবি দেখে ফ্রেডের কাছে মানুষের মতোই মনে হয়। কিন্তু তিনি মানুষ ছিলেন না, ছিলেন মাস্কারাস - সেই ভয়ংকর প্রাণীদের বংশধর যাদের কথা শুনলে একসময় মানুষ ভয়ে কেঁপে উঠত। সে সবচাইতে অবাক হয় এটা ভেবে যে মানুষ সে সময় একত্রে বাস করত, আর তখন এ দেশ ছিল গোটা মানবজাতির প্রতিনিধিত্বকারী, মিথুনিয়া - হ্যাঁ, একদিন এদেশের নাম ছিল মিথুনিয়া, এখন তা থেকে হয়েছে 'সোমার'। জাতীয়তাবাদ এ গ্রহকে যে ভাঙন ছাড়া আর কি উপহার দিল - তা ফ্রেডের মাথ্য আসে না। ইতিহাস থেকে মানুষ যে আদৌ কিছু শেখে না তা তো আজ দিনের আলোর মতো পরিষ্কার! সে পিটারসন মেমোরিয়ালের বাইরে দাঁড় করানো পিটারসনের বিশাল মূর্তিটা থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে জোর পায়ে এগিয়ে চলল তার হোস্টেলের দিকে।