অসম্ভবঃ চার
জনের নাতিকে পড়িয়ে ফ্রেড কলেজের হোস্টেলে ফিরছে। জনের বাড়ীটা তার হোস্টেল
থেকে বেশী দূরে নয়। সে ভেবে পায়নি জন এরকম একটি জায়গায় কিভাবে থাকার জায়গা
পেল। পরে অবশ্য ড্যান তাকে বলেছে যে, জনকে ঐ বাড়ীতে থাকার অনুমতি তাকে
আদালতই দিয়েছে। কেন দিয়েছে জিজ্ঞেস করলে ড্যান জবাব দেয় যে, এদেশের
স্বাধীনতায় জনের বাবার বিশেষ ভুমিকা ছিল। তারই প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে
আদালত তাকে ঐ বাড়ীতে থাকতে দিয়েছে। ফ্রেড বলে, জনের বাবা দেশের জন্য
লড়েছেন, ভালো কথা; কিন্তু তার এই মহৎ কাজের জন্য তার পরিবারকে দেশের
কেন্দ্রস্থলে থাকার জায়গা দিতে হবে - এটা তো ঠিক নয়। এর অর্থ কি এই দাঁড়ায়
না যে, জন তার বাবার মহৎ কর্মকে নিয়ে ব্যবসা করছে অথবা রাষ্ট্র জনের বাবার
মহৎ কর্মের মূল্য - যা কিনা কখনোই কোনো কিছু দ্বারা শোধ করার নয় - পরিশোধ
করার চেষ্টা করছে? ড্যান জবাবে কোনো উত্তর দেয় না, চুপ করে থাকে সে।
মানুষের চিন্তা-ভাবনাগুলো যখন খুবই স্বচ্ছ হয় তখন আসলে তাতে মৌন সম্মতি
দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না, বিশেষ করে তা যখন শোনা যায় সাধারণ কোনো
মানুষের মুখ থেকে। কয়েকমিনিট চুপ থেকে ড্যান বলে, সত্যি কথা বলতে কি, এই
জগতে সবার দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়; বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নভাবে ও বিভিন্ন উপায়ে
চিন্তা করে। তাই এই সমাজে যে একটা সামান্য ব্যাপারেও অনেক মত থাকবে - এটাই
স্বাভাবিক। ফ্রেড বুঝতে পারে না ড্যান কি বোঝাতে চাচ্ছে। সে বলে, তা ঠিক।
কিন্তু সমাজের কি উচিত নয় এসব দৃষ্টিভঙ্গির মাঝে সবচাইতে ভালো মতটি গ্রহণ
করা? অবশ্যই, জবাব দেয় ড্যান। তবে এখানেও কিছু সমস্যা রয়েছে। সমাজ তো কোনো
বিবেচক নয় যে সে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মতামতটি গ্রহণ করবে। বরং
এটা সমাজের মানুষদের নিজেদেরই দায়িত্ব, অন্যকথায় বলা যায়, সমাজের
নীতি-নির্ধারকদের দায়িত্ব। কিন্তু আমাদের সমাজের নীতি-নির্ধারকরা তা করছেন
না। ড্যানের কথা শেষ হলে ফ্রেড বলে, হ্যাঁ, কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছ,
তারা কেন এমনটি করছেন না? ভেবেছি, অনেক ভেবেছি, কিন্তু কোনো কূল পাইনি।
হয়তো তারা নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয় বলেই এমনটা করে। জবাব দেয়
ড্যান। স্বার্থ? হ্যাঁ, স্বার্থই এর পেছনে মুখ্য ভুমিকা পালন করে। এই
জিনিসটা না থাকলে হয়তো এ জগৎ একটা সুন্দর জায়গায় পরিণত হত। এজগতে পাশাপাশি
অবস্থান করেও একজন মানুষ আরেকজনকে চিনতে পারে না এই স্বার্থের কারণেই। বলে
ফ্রেড। পিটারসন মেমরিয়ালের সামনে দিয়ে যাবার সময় প্রতিদিন তার এই একটি
জিনিসই মনে হয়। কোনো এককালে এ জগতে বাস করতো এক ভয়ঙ্কর প্রাণী, তাদেরই মধ্য
থেকে একজন এগিয়ে আসে তাদেরকেই ধ্বংস করতে সাহায্য করার জন্য, আর সেই
ব্যক্তিটি ছিলেন পিটারসন। লোকটির ছবি দেখে ফ্রেডের কাছে মানুষের মতোই মনে
হয়। কিন্তু তিনি মানুষ ছিলেন না, ছিলেন মাস্কারাস - সেই ভয়ংকর প্রাণীদের
বংশধর যাদের কথা শুনলে একসময় মানুষ ভয়ে কেঁপে উঠত। সে সবচাইতে অবাক হয় এটা
ভেবে যে মানুষ সে সময় একত্রে বাস করত, আর তখন এ দেশ ছিল গোটা মানবজাতির
প্রতিনিধিত্বকারী, মিথুনিয়া - হ্যাঁ, একদিন এদেশের নাম ছিল মিথুনিয়া, এখন
তা থেকে হয়েছে 'সোমার'। জাতীয়তাবাদ এ গ্রহকে যে ভাঙন ছাড়া আর কি উপহার দিল -
তা ফ্রেডের মাথ্য আসে না। ইতিহাস থেকে মানুষ যে আদৌ কিছু শেখে না তা তো আজ
দিনের আলোর মতো পরিষ্কার! সে পিটারসন মেমোরিয়ালের বাইরে দাঁড় করানো
পিটারসনের বিশাল মূর্তিটা থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে জোর পায়ে এগিয়ে চলল তার
হোস্টেলের দিকে।
অসম্ভবঃ তিন
দেখতে দেখতে কিভাবে যে একমাস কেটে গেল, ফ্রেড টেরই পেল না। সোমারে এখন
বর্ষাকাল। প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হয় এসময়।এমনি এক বর্ষণমুখর সন্ধায় তার
বিছানায় বসে পাশের জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখছিল। ড্যান তার বিছানায় শুয়ে শুয়ে
বই পড়ছিল। নাহ, ক্লাসের পড়া নয়। উপন্যাস পড়ছে সে।
সে ড্যানের দিকে তাকাল। বলল, "একটা জিনিস আমার জানা ছিল না।"
-"কি?"
-"রাজনীতিকরাও উপন্যাস পড়ে!"
-"রাজনীতিকরা সব পড়ে। একটা দলকে নেতৃত্ব দিতে চাইলে; একটা দেশ পরিচালনা করতে গেলে শুধু যোগ্যতা থাকলে হয় না অনেক কিছু জানতেও হয়।"
-"এত জেনে কি লাভ হয় বল? একবার ক্ষমতায় যেতে পারলে তো সবাই দুর্নীতিতে শীর্ষে চলে যায়।"
-"সবাই কি একরকম হয়, বল? কেউ নিজের জ্ঞানকে ভালো কাজে লাগায়, আবার কেউবা খারাপ কাজে - এটাই তো জগতের নিয়ম।"
-"জগতের নিয়ম! জগত নিজে নিজে নিয়ম সৃষ্টি করতে পারে নাকি?"
-"জগত হয়তো পারেনা; কিন্তু স্রষ্টা তো পারেন।"
-"তাহলে এর অর্থ কি এটা হচ্ছেনা যে, স্রষ্টাই আমাদের দিয়ে এসব করাচ্ছেন?"
-"হ্যাঁ, অনেকটা তাই।"
-"কেন তিনি এমন করছেন?"
-"এর সঠিক জবাব আমার কাছে নেই। তাঁর জগত পরিচালনার এ নীতি আমার কাছে বড় অদ্ভুত লাগে।"
-"কারণ তুমি শুরুতেই ভুল করেছ।"
-"কীভাবে?"
-"স্রষ্টা আমাদের মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন; এবং তিনিই আমাদের ভালোমন্দ নির্বাচনের সুযোগ দিয়েছেন। কাজেই এটা জগতের কোনো নীতি নয়; এটা আমাদের তৈরী করা নীতি।এবং আমাদের এই নীতি তৈরি করার পেছনে যথেষ্ট কারণও আছে। তবে এর মাঝে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে কারণটি তা হলঃ আমরা এই দুর্নীতি, কু-নীতির মাঝে বসবাস করতে করতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি । আর এই হতাশা থেকে মুক্তি পেতে খোদ এই কাজকর্ম গুলোকেই 'জগতের নিয়ম' বানিয়ে দিয়েছি।"
-"তা ঠিক । কিন্ত সমাজের প্রতিটি শিরায় শিরায় বয়ে চলা এই দুর্নীতি, কু-নীতি থেকে সমাজকে বাঁচানোর এ গুরু দায়িত্ব নেবে কে?"
-"এই সমস্যার মুকাবিলা করা একার পক্ষে অসম্ভব; এজন্য চাই সামষ্টিক উদ্যোগ।"
-"আর এজন্য দরকার একটি আদর্শবাদী সামাজিক-রাজনৈতিক দল, নয় কি?"
-"তুমি ঠিক বলেছ। এ সমস্যা সমাধান করতে চাইলে শুধুমাত্র একটা আদর্শবাদী সামাজিক সংস্থা বা দল যথেষ্ঠ নয়; একটা আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক দলও অত্যন্ত জরুরী।"
-"তাহলে সব জেনেশুনেও তুমি রাজনীতি করছ না কেন?"
-"কারণটা এর আগেও অনেকবার বলেছি এবং আজও বলছিঃ আমি নিজেকে রাজনীতিতে জড়াতে চাচ্ছিনা কারণ এ দেশে রাজনৈতিকভাবে আদর্শিক কোনো দল নেই।"
-"কেন? 'জনফ্রন্ট'কে কি তোমার কোনো আদর্শিক দল মনে হয় না?"
-"হ্যাঁ, তারা তাদের দলীয় ব্যাপারে আদর্শিক- কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু দলীয় আদর্শ ও রাজনৈতিক আদর্শ মোটেও এক জিনিস নয়।"
-"তাহলে আমরা দেশ পরিচালনা করছি কিভাবে?"
-"দলীয় আদর্শ দিয়ে। একারণেই তো তোমাদের দলীয় লোকজন সব জায়গায় অন্যান্যদের চেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছে, পাচ্ছেনা কি?"
-"মানলাম এদেশে রাজনৈতিকভাবে আদর্শিক কোনো দল নেই। আর এ জন্য তুমি দর্শক হয়ে শুধু বসে বসে দেখবে?"
-"এছাড়া আর কি উপায় আছে বল? আমি একজন সামান্য মানুষ। রাজনৈতিক সংস্কার আমার দ্বারা কি আর সম্ভব?"
-"কেন সম্ভব নয়? চেষ্টা থাকলে সব সম্ভব- এটা তো তুমি রোজই বল।"
-"কিন্তু একটা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা কোনো ছেলে খেলা নয়। যে কেউ চাইলে তা পারে না।"
-"এখানে আবার রাজনৈতিক দল গড়ার কথা কে বলল?"
-"তার মানে তুমি বলতে চাও যে একটা প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের মাঝে থেকে সেই দলকে একটি আদর্শবাদী দলে পরিণত করা?"
-"ঠিক তাই।"
-"কিন্তু এটা করতে গেলে এমনও তো হতে পারে যে আমি নিজেই তাদের আদর্শের ফাঁদে পড়ে গেলাম।"
-"তীব্র প্রচেষ্টা আর দৃঢ় ইচ্ছা থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। ইতিহাস বইয়ে পড়নি পিটারসন একজন এলিয়েন বংশদ্ভুত হয়েও আমাদের কীভাবে সাহায্য করেছিলেন এ গ্রহ থেকে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্যে?"
ফ্রেড ড্যানের প্রশ্নের কোনো জবাব দিল না। সে তার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল জানালার বাইরে। বাইরে এখনও অবিরাম বৃষ্টি পড়ছে।
সে ড্যানের দিকে তাকাল। বলল, "একটা জিনিস আমার জানা ছিল না।"
-"কি?"
-"রাজনীতিকরাও উপন্যাস পড়ে!"
-"রাজনীতিকরা সব পড়ে। একটা দলকে নেতৃত্ব দিতে চাইলে; একটা দেশ পরিচালনা করতে গেলে শুধু যোগ্যতা থাকলে হয় না অনেক কিছু জানতেও হয়।"
-"এত জেনে কি লাভ হয় বল? একবার ক্ষমতায় যেতে পারলে তো সবাই দুর্নীতিতে শীর্ষে চলে যায়।"
-"সবাই কি একরকম হয়, বল? কেউ নিজের জ্ঞানকে ভালো কাজে লাগায়, আবার কেউবা খারাপ কাজে - এটাই তো জগতের নিয়ম।"
-"জগতের নিয়ম! জগত নিজে নিজে নিয়ম সৃষ্টি করতে পারে নাকি?"
-"জগত হয়তো পারেনা; কিন্তু স্রষ্টা তো পারেন।"
-"তাহলে এর অর্থ কি এটা হচ্ছেনা যে, স্রষ্টাই আমাদের দিয়ে এসব করাচ্ছেন?"
-"হ্যাঁ, অনেকটা তাই।"
-"কেন তিনি এমন করছেন?"
-"এর সঠিক জবাব আমার কাছে নেই। তাঁর জগত পরিচালনার এ নীতি আমার কাছে বড় অদ্ভুত লাগে।"
-"কারণ তুমি শুরুতেই ভুল করেছ।"
-"কীভাবে?"
-"স্রষ্টা আমাদের মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন; এবং তিনিই আমাদের ভালোমন্দ নির্বাচনের সুযোগ দিয়েছেন। কাজেই এটা জগতের কোনো নীতি নয়; এটা আমাদের তৈরী করা নীতি।এবং আমাদের এই নীতি তৈরি করার পেছনে যথেষ্ট কারণও আছে। তবে এর মাঝে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে কারণটি তা হলঃ আমরা এই দুর্নীতি, কু-নীতির মাঝে বসবাস করতে করতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি । আর এই হতাশা থেকে মুক্তি পেতে খোদ এই কাজকর্ম গুলোকেই 'জগতের নিয়ম' বানিয়ে দিয়েছি।"
-"তা ঠিক । কিন্ত সমাজের প্রতিটি শিরায় শিরায় বয়ে চলা এই দুর্নীতি, কু-নীতি থেকে সমাজকে বাঁচানোর এ গুরু দায়িত্ব নেবে কে?"
-"এই সমস্যার মুকাবিলা করা একার পক্ষে অসম্ভব; এজন্য চাই সামষ্টিক উদ্যোগ।"
-"আর এজন্য দরকার একটি আদর্শবাদী সামাজিক-রাজনৈতিক দল, নয় কি?"
-"তুমি ঠিক বলেছ। এ সমস্যা সমাধান করতে চাইলে শুধুমাত্র একটা আদর্শবাদী সামাজিক সংস্থা বা দল যথেষ্ঠ নয়; একটা আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক দলও অত্যন্ত জরুরী।"
-"তাহলে সব জেনেশুনেও তুমি রাজনীতি করছ না কেন?"
-"কারণটা এর আগেও অনেকবার বলেছি এবং আজও বলছিঃ আমি নিজেকে রাজনীতিতে জড়াতে চাচ্ছিনা কারণ এ দেশে রাজনৈতিকভাবে আদর্শিক কোনো দল নেই।"
-"কেন? 'জনফ্রন্ট'কে কি তোমার কোনো আদর্শিক দল মনে হয় না?"
-"হ্যাঁ, তারা তাদের দলীয় ব্যাপারে আদর্শিক- কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু দলীয় আদর্শ ও রাজনৈতিক আদর্শ মোটেও এক জিনিস নয়।"
-"তাহলে আমরা দেশ পরিচালনা করছি কিভাবে?"
-"দলীয় আদর্শ দিয়ে। একারণেই তো তোমাদের দলীয় লোকজন সব জায়গায় অন্যান্যদের চেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছে, পাচ্ছেনা কি?"
-"মানলাম এদেশে রাজনৈতিকভাবে আদর্শিক কোনো দল নেই। আর এ জন্য তুমি দর্শক হয়ে শুধু বসে বসে দেখবে?"
-"এছাড়া আর কি উপায় আছে বল? আমি একজন সামান্য মানুষ। রাজনৈতিক সংস্কার আমার দ্বারা কি আর সম্ভব?"
-"কেন সম্ভব নয়? চেষ্টা থাকলে সব সম্ভব- এটা তো তুমি রোজই বল।"
-"কিন্তু একটা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা কোনো ছেলে খেলা নয়। যে কেউ চাইলে তা পারে না।"
-"এখানে আবার রাজনৈতিক দল গড়ার কথা কে বলল?"
-"তার মানে তুমি বলতে চাও যে একটা প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের মাঝে থেকে সেই দলকে একটি আদর্শবাদী দলে পরিণত করা?"
-"ঠিক তাই।"
-"কিন্তু এটা করতে গেলে এমনও তো হতে পারে যে আমি নিজেই তাদের আদর্শের ফাঁদে পড়ে গেলাম।"
-"তীব্র প্রচেষ্টা আর দৃঢ় ইচ্ছা থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। ইতিহাস বইয়ে পড়নি পিটারসন একজন এলিয়েন বংশদ্ভুত হয়েও আমাদের কীভাবে সাহায্য করেছিলেন এ গ্রহ থেকে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্যে?"
ফ্রেড ড্যানের প্রশ্নের কোনো জবাব দিল না। সে তার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল জানালার বাইরে। বাইরে এখনও অবিরাম বৃষ্টি পড়ছে।
অসম্ভবঃ দুই
জীবনের এই চরম মুহুর্তগুলো অনেকবার এসেছে ফ্রেডের জীবনে এবং প্রতিবারই
সে টিকে থেকেছে সাফল্যের সাথে, এরই নাম বোধহয় জীবন-যুদ্ধ, ভাবছিল ফ্রেড।
তার বাবা বহু আগেই তাদের ত্যাগ করেছে: মার কাছে সে বহুবার একথা শুনেছে,
কিন্তু তার বাবা এখন কোথায়, জীবিত কি মৃত - তা কোনোদিনও মা বলেনি তাকে। এসব
মনে হলে মায়ের ওপর খুব অভিমান হয় ফ্রেডের। বিশেষত একারণে যে তার মা আরেকটা
বিয়ে করেছে সে তার মায়ের পেটে থাকতেই।
ড্যানের ডাকে সে ঘুম থেকে জাগল। ভাবতে ভাবতে আজও সে পড়ার টেবিলে ঘুমিয়ে পড়েছে।
নাহ, ইদানিং যেন পড়াশুনায় আর মনই বসছে না!
"কিরে কি সিদ্ধান্ত নিলি?" জিজ্ঞেস করল ড্যান।
ফ্রেডের মনে পড়ল, জনের দেয়া টিউশনি সে করাবে কিনা তা আজ তাকে জানানোর কথা। ঠিক এ চিন্তাটাই সে করছিল কিন্তু হুট করে সব কেমনজানি এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল।
'জীবন-যুদ্ধ', হাসল সে।
-"কি ব্যাপার হাসছিস যে? আমি কি তোকে কোনো হাসির কথা বললাম নাকি?"
ফ্রেড হাসি থামিয়ে ড্যানের দিকে তাকাল। তারপর সে গম্ভিরমুখে বলল, "না, এমনিতেই হাসছিলাম।"
"টিউশনির ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নিলি?" পুনরায় জিজ্ঞেস করল ড্যান।
-"সিদ্ধান্ত? সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা যদি আমার থাকত তবে জনের সাথে দেখাই করতাম না। মানুষ যখন বেকায়দায় পড়ে তখন তার 'নিজের সিদ্ধান্ত' বলে আর কিছু থাকে না।"
-"থাকে, থাকে, তুই আসলে নিজেকে বড় অসহায় ভাবিস। দুনিয়ার সব মানুষই জীবনে কোনো না কোনো সময় কঠিন বাস্তবতার সন্মুখীন হয় এবং তারা অধিকাংশই তা জয় করে নেয়। "
-"তুমি তো কোনোদিন এর মাঝে পড়নি, যেদিন পড়বে সেদিন বুঝবে।"
হাসল ড্যান। বলল, "মানুষের লাইফস্টাইল দেখে কি সব কিছু বোঝা যায়?"
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ড্যান আবার শুরু করল, "যাকগে ওসব কথা। আমি তাহলে জনকে বলে দিই যে তুমি তার প্রস্তাবে রাজী হয়েছ।"
বলেই সে ঘর হতে বেরিয়ে গেল।
ফ্রেড পিটারসন পার্কের একটা বেঞ্চে বসে আছে। জনের সাথে তার এখানে দেখা করার কথা। পার্কটা তার কলেজের একদম কাছে। কিন্তু সে একদিনও এখানে আসেনি। পার্কের পাশেই পিটারসন মেমরিয়াল। মেমরিয়ালের দুইটা গেট: একটা বাইরে থেকে, যা কিনা মূল ফটক এবং অপরটি পার্কের মধ্য দিয়ে। পার্কের মধ্য দিয়ে ঢোকার ফটকটির ওপরে পিটারসনের এক বিরাট ছবি।
ফ্রেড ছবিটার দিকে তাকিয়ে হাসছিল।
"তুমি যা ভাবছ মূল ঘটনা আসলে তা ছিল না।" বলতে বলতে জন এসে তার পাশে বসলেন।
-"তাহলে কি ছিল? পিটারসন এলিয়েনদের সাথে যুদ্ধ করেন নি?"
-"করেছিলেন এবং মজার ব্যাপার হলো তিনি নিজেও তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।"
-"এগুলো তো রূপকথা।"
-"তোমার কাছে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক। তুমি তো আর বইয়ের বাইরের ইতিহাস জান না।"
-"কেন? বইগুলোতে কি ভুল কিছু লেখা আছে?"
-"না নেই। তবে ইতিহাসের একটা বৈশিষ্ট্য কি জান? আংশিক ইতিহাস জেনে কোনোকিছুই যাচাই করা যায়না। তুমিও বুঝবে যেদিন আমাদের কাতারে আসবে।" থামল জন। তারপর আবার শুরু করলেন, "যাহোক, এখন কাজের কথায় আসা যাক। তুমি তাহলে আগামীকাল থেকে শুরু করছ।"
-"কিন্তু কাকে পড়াব তা তো এখন পর্যন্ত বলেন নি!"
-"আমার নাতিকে পড়াবে। ড্যান তোমাকে আমার ছেলের বাড়িতে নিয়ে যাবে।" থামল জন। তারপর আবার শুরু করলেন, "ওকে। তাহলে সে কথাই রইল। আমি তাহলে উঠি। জানই তো কত ব্যস্ততার মাঝে থাকতে হয়। মনে রেখ, ইতিহাস হলো এমন একটা জিনিস যা মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আর যারা ইতিহাস বিমুখ তারা পেছনেই পড়ে থাকে। এখন হয়তো তুমি তা বুঝবে না। কিন্তু যখন তোমার জীবনের সব স্বপ্ন সত্যি হবে, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিন বুঝবে, জীবনে স্বার্থকতা আসলে কোথায়। অবশ্য তখন সময় আর হয়তো থাকবে না নিজেকে শুধরিয়ে নেয়ার মতো। তবে যারা নিজেকে শুধরিয়ে নিতে পারে তারা হলো বিশ্বের সবচেয়ে সুখি মানুষদের একজন।" বলেই জন উঠে দাঁড়াল এবং দ্রুত পা বাড়াল পিটারসন মেমরিয়ালের ফটকের দিকে। ফ্রেড সেদিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর পার্কের বেঞ্চটার দুদিকে দু হাত প্রসারিত করে তাকিয়ে থাকল আকাশের দিকে।
ড্যানের ডাকে সে ঘুম থেকে জাগল। ভাবতে ভাবতে আজও সে পড়ার টেবিলে ঘুমিয়ে পড়েছে।
নাহ, ইদানিং যেন পড়াশুনায় আর মনই বসছে না!
"কিরে কি সিদ্ধান্ত নিলি?" জিজ্ঞেস করল ড্যান।
ফ্রেডের মনে পড়ল, জনের দেয়া টিউশনি সে করাবে কিনা তা আজ তাকে জানানোর কথা। ঠিক এ চিন্তাটাই সে করছিল কিন্তু হুট করে সব কেমনজানি এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল।
'জীবন-যুদ্ধ', হাসল সে।
-"কি ব্যাপার হাসছিস যে? আমি কি তোকে কোনো হাসির কথা বললাম নাকি?"
ফ্রেড হাসি থামিয়ে ড্যানের দিকে তাকাল। তারপর সে গম্ভিরমুখে বলল, "না, এমনিতেই হাসছিলাম।"
"টিউশনির ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নিলি?" পুনরায় জিজ্ঞেস করল ড্যান।
-"সিদ্ধান্ত? সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা যদি আমার থাকত তবে জনের সাথে দেখাই করতাম না। মানুষ যখন বেকায়দায় পড়ে তখন তার 'নিজের সিদ্ধান্ত' বলে আর কিছু থাকে না।"
-"থাকে, থাকে, তুই আসলে নিজেকে বড় অসহায় ভাবিস। দুনিয়ার সব মানুষই জীবনে কোনো না কোনো সময় কঠিন বাস্তবতার সন্মুখীন হয় এবং তারা অধিকাংশই তা জয় করে নেয়। "
-"তুমি তো কোনোদিন এর মাঝে পড়নি, যেদিন পড়বে সেদিন বুঝবে।"
হাসল ড্যান। বলল, "মানুষের লাইফস্টাইল দেখে কি সব কিছু বোঝা যায়?"
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ড্যান আবার শুরু করল, "যাকগে ওসব কথা। আমি তাহলে জনকে বলে দিই যে তুমি তার প্রস্তাবে রাজী হয়েছ।"
বলেই সে ঘর হতে বেরিয়ে গেল।
ফ্রেড পিটারসন পার্কের একটা বেঞ্চে বসে আছে। জনের সাথে তার এখানে দেখা করার কথা। পার্কটা তার কলেজের একদম কাছে। কিন্তু সে একদিনও এখানে আসেনি। পার্কের পাশেই পিটারসন মেমরিয়াল। মেমরিয়ালের দুইটা গেট: একটা বাইরে থেকে, যা কিনা মূল ফটক এবং অপরটি পার্কের মধ্য দিয়ে। পার্কের মধ্য দিয়ে ঢোকার ফটকটির ওপরে পিটারসনের এক বিরাট ছবি।
ফ্রেড ছবিটার দিকে তাকিয়ে হাসছিল।
"তুমি যা ভাবছ মূল ঘটনা আসলে তা ছিল না।" বলতে বলতে জন এসে তার পাশে বসলেন।
-"তাহলে কি ছিল? পিটারসন এলিয়েনদের সাথে যুদ্ধ করেন নি?"
-"করেছিলেন এবং মজার ব্যাপার হলো তিনি নিজেও তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।"
-"এগুলো তো রূপকথা।"
-"তোমার কাছে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক। তুমি তো আর বইয়ের বাইরের ইতিহাস জান না।"
-"কেন? বইগুলোতে কি ভুল কিছু লেখা আছে?"
-"না নেই। তবে ইতিহাসের একটা বৈশিষ্ট্য কি জান? আংশিক ইতিহাস জেনে কোনোকিছুই যাচাই করা যায়না। তুমিও বুঝবে যেদিন আমাদের কাতারে আসবে।" থামল জন। তারপর আবার শুরু করলেন, "যাহোক, এখন কাজের কথায় আসা যাক। তুমি তাহলে আগামীকাল থেকে শুরু করছ।"
-"কিন্তু কাকে পড়াব তা তো এখন পর্যন্ত বলেন নি!"
-"আমার নাতিকে পড়াবে। ড্যান তোমাকে আমার ছেলের বাড়িতে নিয়ে যাবে।" থামল জন। তারপর আবার শুরু করলেন, "ওকে। তাহলে সে কথাই রইল। আমি তাহলে উঠি। জানই তো কত ব্যস্ততার মাঝে থাকতে হয়। মনে রেখ, ইতিহাস হলো এমন একটা জিনিস যা মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আর যারা ইতিহাস বিমুখ তারা পেছনেই পড়ে থাকে। এখন হয়তো তুমি তা বুঝবে না। কিন্তু যখন তোমার জীবনের সব স্বপ্ন সত্যি হবে, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিন বুঝবে, জীবনে স্বার্থকতা আসলে কোথায়। অবশ্য তখন সময় আর হয়তো থাকবে না নিজেকে শুধরিয়ে নেয়ার মতো। তবে যারা নিজেকে শুধরিয়ে নিতে পারে তারা হলো বিশ্বের সবচেয়ে সুখি মানুষদের একজন।" বলেই জন উঠে দাঁড়াল এবং দ্রুত পা বাড়াল পিটারসন মেমরিয়ালের ফটকের দিকে। ফ্রেড সেদিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর পার্কের বেঞ্চটার দুদিকে দু হাত প্রসারিত করে তাকিয়ে থাকল আকাশের দিকে।
অসম্ভবঃ এক
[এটা নিছক একটা লেখা। কারো জীবন কাহীনির সাথে মিলে গেলে তা অলৌকিক ছাড়া আর কিছু নয়]
পৃথিবী নামে পরিচিত গ্রহ থেকে ২০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এক গ্রহের বাসিন্দা হলো ফ্রেড। সে সবে মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠেছে। খুবই ভালো ছাত্র সে। জীবনে সে এক রোল ছাড়া দুই রোল করে নি। সে যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পড়ে, তা তার দেশের সব চেয়ে বিখ্যাত একটা প্রতিষ্ঠান। সে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারির একজন ছাত্র।
সে যে দেশে থাকে সে দেশের নাম 'সোমার'। তার পৃথিবীতে সব চেয়ে ছোট রাষ্ট্র এটা।
ফ্রেড বড় হয়ে অর্থনীতিবিদ হতে চায়। গরিব ঘরের সন্তান ফ্রেড অনেক কষ্টে এতদূর উঠেছে, অনেক দুঃখ-কষ্ট সে নিরবে মাথা পেতে নিয়েছে, আজ সে প্রতিষ্ঠার দ্বার প্রান্তে উন্নিত হয়েছে।
তার বিশ্ববিদ্যালয়ের যে হলে সে থাকে সেখানে তার একজন রুমমেটও রয়েছে। তার রুমমেটের নাম হলো ড্যান। সে ছাত্র রাজনীতির সাথে বিশেষভাবে জড়িত। সে মাঝে মাঝে ফ্রেডকে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বুঝাতে চেষ্টা করে; কিন্তু সে কানেই নেয় না। তার সামনে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে, তা বাদ দিয়ে সে রাজনীতি করবে! এটা তার মতো কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হওয়া ব্যক্তির কাছে কতকটা নির্মমও ঠেকে।
সারাদিন ফ্রেড পড়াশুনা করে, নিয়মিত ক্লাশ করে, আর অবসর পেলে তার স্বপ্ন নিয়ে ভাবে। অর্থনীতিবিদ হয়ে গ্রামের সবার তাচ্ছিল্লের জবাব দিবে। ভাবতে ভাবতে অনেকসময় সে ঘুমিয়ে পড়ে। তার রুমমেট এসে তাকে জাগায়।
একদিন একটা চিঠি এল। চিঠিটা তার মায়ের লেখা। চিঠিতে তার মা লিখেছেন যে তার পক্ষে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ যোগান দেয়া সম্ভব নয়। তাকে এখন নিজের খরচ নিজেকেই চালাতে হবে। তার মাথায় যেন বাজ পড়ল। অর্থাভাবে তার অর্থনীতি পড়ার স্বপ্নই না আজ ভেস্তে যায়! তার রুমমেট তার দিকে তাকাল, বলল, "কোনো সমস্যা নাকি, দোস্ত? থাকলে খালি আমাকে বল্। নিমিষেই সমাধান করে দেব।"
ফ্রেড হাসি হাসি ভাব করে বলল, "না, কোনো সমস্যা নাই। বাড়ীর কথা মনে পড়ছিল- এই আর কি!"
প্রকৃত ঘটনা সে নিজের কাছেই রাখল।
একদিন, দুইদিন, তিনদিন- এভাবে সারা মাস চলে গেল। কিন্তু ফ্রেড কোন টিউশনি বা পার্ট-টাইম চাকরী পেতে ব্যর্থ হলো। অবশেষে সে তার রুমমেট ড্যানকে সব কিছু খুলে বলল। তার বন্ধুবর বলল, "ও, এই তাহলে ঘটনা। আমাকে আগে বলবি তো। আমার সাথে চল, আমি তোর ব্যবস্থা করছি।"
ড্যান তাকে নিয়ে গেলো এক ভদ্রলোকের কাছে। লোকটির মুখে দাঁড়ি ভর্তি। সব চুল সাদা। চোখে কালো চশমা।
ড্যান তার কাছে গিয়ে বলল, "এই সেই রুমমেট যার কথা আমি আপনাকে বলেছিলাম।"
লোকটি ফ্রেডকে লক্ষ করে বললেন, "বস বাবা, বস।" তিনি তার দিকে একটা চেয়ার এগিয়ে দিলেন।
ফ্রেড সন্দেহসূচক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল।
লোকটা ফ্রেডের দিকে তখনো স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়েই ছিলেন। ফ্রেড বসতেই তিনি বললেন, "আমার মনে হয়না যে তুমি আমাকে চেন না। তবুও বলছি: আমার নাম জন জ্যাকব। আমি এদেশের একজন রাজনৈতিক নেতা, যে কিনা নির্যাতিত-নিপীড়িতদের কথা বলে; মেহনতি মানুষদের পাশে থাকে। এবং আমার গড়া দল 'জনফ্রন্ট' এর ছাত্র সংগঠন এদেশের বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন।"
"আমি জানি", সংক্ষেপে বলল ফ্রেড।
"তুমি কি জান, ছাত্র সংগঠন মানে কি?" বললেন জন।
"ছাত্র সংগঠন মানে হলো ছাত্রদের নিয়ে গঠিত সংগঠন, যার প্রধান কাজ হলো ছাত্রদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করা, দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার তথা ছাত্রদের মাঝে নেতৃত্বের গুণাবলীর বিকাশ ঘটানো - ইত্যাদি।" জবাব দিল ফ্রেড।
-"তুমি তো তাহলে সব কিছুই জান এবং বোঝ দেখছি। তাহলে তুমি ছাত্র রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে রাখ কেন?"
-"কারণ এটা হলো একটা ছাত্র সংগঠনের সংজ্ঞা মাত্র। বাস্তবতার সাথে এর বিস্তর পার্থক্য।"
-"তাই নাকি?"
-"হ্যাঁ।"
-"যেমন?"
-"যেমন- বেশ কিছুদিন আগে আপনাদের সাথে আরেক ছাত্র সংগঠনের বিশাল এক কলহ হয়ে গেল। এটা তো ছাত্র সংগঠনের বৈশিষ্ট্য নয়।"
-"তা তুমি ঠিক বলেছ। কিন্তু কেউ যদি তোমাকে আঘাত করে মেরে ফেলতে চায়, তখন তুমি কি করবে? ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে?"
-"অবশ্যই না। কিন্তু এর সাথে ছাত্র সংগঠনের সম্পর্ক কোথায়?"
"আছে, আছে, সম্পর্ক আছে। এটা ঠিক যে, ছাত্র সংগঠনের উদ্দেশ্যের মাঝে কোলাহল ও অন্তর্দ্বন্দ্ব পড়ে না। তথাপি, সকল সংগঠন আসলে এই আদর্শের মাঝে থাকতে পারে না। আর যারা পারে না, তাদের সংগঠনে কোলাহল ও অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা যায়। আর তারা অনেক সময় শত্রুতাবশতঃ অন্য আদর্শবাদী দলের ক্ষতি করতে চায়। আর তখন সেই আদর্শবাদী দলটাকে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়।" বলে একটু থামলেন জন। তারপর বললেন, "থাক ওসব কথা। একদিন নিশ্চয়ই বুঝতে পারবে। এখন কাজের কথায় আসা যাক।" বলে জন একটু কেশে গলাটা পরিষ্কার করেনিলেন। বললেন, "তোমার একটা টিউশনির ব্যবস্থা হয়ে গেছে। ড্যান তোমাকে সবকিছু বলে দেবে। আর একটা কথা সব সময় আদর্শের মধ্যে থেক। যদি তুমি তোমার আদর্শ থেকে দূরে সরে আস, তবে তোমার ধ্বংস নিশ্চিত।"
পৃথিবী নামে পরিচিত গ্রহ থেকে ২০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এক গ্রহের বাসিন্দা হলো ফ্রেড। সে সবে মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠেছে। খুবই ভালো ছাত্র সে। জীবনে সে এক রোল ছাড়া দুই রোল করে নি। সে যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পড়ে, তা তার দেশের সব চেয়ে বিখ্যাত একটা প্রতিষ্ঠান। সে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারির একজন ছাত্র।
সে যে দেশে থাকে সে দেশের নাম 'সোমার'। তার পৃথিবীতে সব চেয়ে ছোট রাষ্ট্র এটা।
ফ্রেড বড় হয়ে অর্থনীতিবিদ হতে চায়। গরিব ঘরের সন্তান ফ্রেড অনেক কষ্টে এতদূর উঠেছে, অনেক দুঃখ-কষ্ট সে নিরবে মাথা পেতে নিয়েছে, আজ সে প্রতিষ্ঠার দ্বার প্রান্তে উন্নিত হয়েছে।
তার বিশ্ববিদ্যালয়ের যে হলে সে থাকে সেখানে তার একজন রুমমেটও রয়েছে। তার রুমমেটের নাম হলো ড্যান। সে ছাত্র রাজনীতির সাথে বিশেষভাবে জড়িত। সে মাঝে মাঝে ফ্রেডকে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বুঝাতে চেষ্টা করে; কিন্তু সে কানেই নেয় না। তার সামনে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে, তা বাদ দিয়ে সে রাজনীতি করবে! এটা তার মতো কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হওয়া ব্যক্তির কাছে কতকটা নির্মমও ঠেকে।
সারাদিন ফ্রেড পড়াশুনা করে, নিয়মিত ক্লাশ করে, আর অবসর পেলে তার স্বপ্ন নিয়ে ভাবে। অর্থনীতিবিদ হয়ে গ্রামের সবার তাচ্ছিল্লের জবাব দিবে। ভাবতে ভাবতে অনেকসময় সে ঘুমিয়ে পড়ে। তার রুমমেট এসে তাকে জাগায়।
একদিন একটা চিঠি এল। চিঠিটা তার মায়ের লেখা। চিঠিতে তার মা লিখেছেন যে তার পক্ষে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ যোগান দেয়া সম্ভব নয়। তাকে এখন নিজের খরচ নিজেকেই চালাতে হবে। তার মাথায় যেন বাজ পড়ল। অর্থাভাবে তার অর্থনীতি পড়ার স্বপ্নই না আজ ভেস্তে যায়! তার রুমমেট তার দিকে তাকাল, বলল, "কোনো সমস্যা নাকি, দোস্ত? থাকলে খালি আমাকে বল্। নিমিষেই সমাধান করে দেব।"
ফ্রেড হাসি হাসি ভাব করে বলল, "না, কোনো সমস্যা নাই। বাড়ীর কথা মনে পড়ছিল- এই আর কি!"
প্রকৃত ঘটনা সে নিজের কাছেই রাখল।
একদিন, দুইদিন, তিনদিন- এভাবে সারা মাস চলে গেল। কিন্তু ফ্রেড কোন টিউশনি বা পার্ট-টাইম চাকরী পেতে ব্যর্থ হলো। অবশেষে সে তার রুমমেট ড্যানকে সব কিছু খুলে বলল। তার বন্ধুবর বলল, "ও, এই তাহলে ঘটনা। আমাকে আগে বলবি তো। আমার সাথে চল, আমি তোর ব্যবস্থা করছি।"
ড্যান তাকে নিয়ে গেলো এক ভদ্রলোকের কাছে। লোকটির মুখে দাঁড়ি ভর্তি। সব চুল সাদা। চোখে কালো চশমা।
ড্যান তার কাছে গিয়ে বলল, "এই সেই রুমমেট যার কথা আমি আপনাকে বলেছিলাম।"
লোকটি ফ্রেডকে লক্ষ করে বললেন, "বস বাবা, বস।" তিনি তার দিকে একটা চেয়ার এগিয়ে দিলেন।
ফ্রেড সন্দেহসূচক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল।
লোকটা ফ্রেডের দিকে তখনো স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়েই ছিলেন। ফ্রেড বসতেই তিনি বললেন, "আমার মনে হয়না যে তুমি আমাকে চেন না। তবুও বলছি: আমার নাম জন জ্যাকব। আমি এদেশের একজন রাজনৈতিক নেতা, যে কিনা নির্যাতিত-নিপীড়িতদের কথা বলে; মেহনতি মানুষদের পাশে থাকে। এবং আমার গড়া দল 'জনফ্রন্ট' এর ছাত্র সংগঠন এদেশের বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন।"
"আমি জানি", সংক্ষেপে বলল ফ্রেড।
"তুমি কি জান, ছাত্র সংগঠন মানে কি?" বললেন জন।
"ছাত্র সংগঠন মানে হলো ছাত্রদের নিয়ে গঠিত সংগঠন, যার প্রধান কাজ হলো ছাত্রদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করা, দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার তথা ছাত্রদের মাঝে নেতৃত্বের গুণাবলীর বিকাশ ঘটানো - ইত্যাদি।" জবাব দিল ফ্রেড।
-"তুমি তো তাহলে সব কিছুই জান এবং বোঝ দেখছি। তাহলে তুমি ছাত্র রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে রাখ কেন?"
-"কারণ এটা হলো একটা ছাত্র সংগঠনের সংজ্ঞা মাত্র। বাস্তবতার সাথে এর বিস্তর পার্থক্য।"
-"তাই নাকি?"
-"হ্যাঁ।"
-"যেমন?"
-"যেমন- বেশ কিছুদিন আগে আপনাদের সাথে আরেক ছাত্র সংগঠনের বিশাল এক কলহ হয়ে গেল। এটা তো ছাত্র সংগঠনের বৈশিষ্ট্য নয়।"
-"তা তুমি ঠিক বলেছ। কিন্তু কেউ যদি তোমাকে আঘাত করে মেরে ফেলতে চায়, তখন তুমি কি করবে? ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে?"
-"অবশ্যই না। কিন্তু এর সাথে ছাত্র সংগঠনের সম্পর্ক কোথায়?"
"আছে, আছে, সম্পর্ক আছে। এটা ঠিক যে, ছাত্র সংগঠনের উদ্দেশ্যের মাঝে কোলাহল ও অন্তর্দ্বন্দ্ব পড়ে না। তথাপি, সকল সংগঠন আসলে এই আদর্শের মাঝে থাকতে পারে না। আর যারা পারে না, তাদের সংগঠনে কোলাহল ও অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা যায়। আর তারা অনেক সময় শত্রুতাবশতঃ অন্য আদর্শবাদী দলের ক্ষতি করতে চায়। আর তখন সেই আদর্শবাদী দলটাকে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়।" বলে একটু থামলেন জন। তারপর বললেন, "থাক ওসব কথা। একদিন নিশ্চয়ই বুঝতে পারবে। এখন কাজের কথায় আসা যাক।" বলে জন একটু কেশে গলাটা পরিষ্কার করেনিলেন। বললেন, "তোমার একটা টিউশনির ব্যবস্থা হয়ে গেছে। ড্যান তোমাকে সবকিছু বলে দেবে। আর একটা কথা সব সময় আদর্শের মধ্যে থেক। যদি তুমি তোমার আদর্শ থেকে দূরে সরে আস, তবে তোমার ধ্বংস নিশ্চিত।"
Subscribe to:
Posts (Atom)